মাত্র ৩৩ বছর জীবনকালে গণিত জগতকে আলোড়িত করা এক মহান গনিতজ্ঞ হলেন শ্রীনিবাস রামানুজন। এত সংক্ষিপ্ত জীবনকাল হলেও তিনি আধুনিক গণিত বিজ্ঞানীদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
প্রতি বছর জাতীয় গণিত দিবস (National Mathematics Day) পালন করা হয় ২২ ডিসেম্বর। এই দিনটি বিখ্যাত গণিতবিশারদ শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্মদিন
জন্ম ও বংশ পরিচয়
শ্রীনিবাস রামানুজন ১৮৮৭ সালের ২২শে ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর বিরোধ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তিনি মাদ্রাজ শহর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের এই ছোট্ট গ্রামটিতে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র এক বছর বয়সে তার মা তাকে মাদ্রাজের কাছেই একটি শহর কুম্বাকোনাম শহরে নিয়ে যান। তার বাবা এই শহরেরই একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। ১৮৮৯ সালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন।
রামানুজন-এর শিক্ষা জীবন
ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং অন্তর্মুখী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় টাউন হাইস্কুলে। এরপর অপর একটি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯০৩ সালের সেই স্কুল থেকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সরকারি কলেজে ভর্তি হন বৃত্তি পেয়ে। প্রথম থেকেই গণিতই ছিল তার সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। স্স্কুল জীবনেই জটিল জটিল অংক সমাধান করা শুরু করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে গভর্নমেন্ট কলেজের ডিগ্রী ক্লাসের লেনির ত্রিকোণমিতির বই থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই কঠিন গণিত সমস্যা সমাধান করেছিলেন।
১৯০০ সালে গণিতের জ্যামিতিক এবং গাণিতিক সিরিজের সমষ্টি নিয়ে মৌলিকভাবে কাজ করেন। ১৯০২ সালে ঘন সমীকরণ গুলি কিভাবে সমাধান করতে হয় তা রামানুজন দেখান এবং তিনি কোয়াট্রিক সমাধানের জন্য তার নিজের পদ্ধতি তৈরি করেনঅংকের এই অসামান্য প্রতিভা সকলকে অবাক করে দিয়েছিল।
ধীরে ধীরে রামানুজন হয়ে ওঠেন এক বিশ্ব বিখ্যাত গণিতজ্ঞ। অংকের প্রতি তীব্র আসক্তি অন্য বিষয় থেকেই তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। তাই বেশ কয়েকবারের চেষ্টার পর তিনি FA পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রামানুজন : কর্মজীবন ও সংসার জীবন
অংকের আনুগত্য তাকে প্রথাগত ডিগ্রী লাভে দেরি করিয়ে দিয়েছিল। অল্পকাল পরি তিনি বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন এবং মাদ্রাজ পোস্ট ট্রাস্টের ৩০ টাকা মাইনের ক্লার্কের চাকরি গ্রহণ করেন।
এরপর শুরু হয় তার কঠিন জীবন সংগ্রাম। সংসারের চাহিদা এদিকে মাইনেও যথেষ্ট নয় অন্যদিকে গণিতের প্রতি তার তীব্র ভালবাসা। যখনই সময় পেতেন স্থানীয় লাইব্রেরীতে গিয়ে গণিতের কঠিন কঠিন বই থেকে অংক করতেন। সম্পূর্ণ মৌলিকভাবে তিনি অংকের অনেক সমস্যার যেমন সমাধান করেন তেমনি অনেক গাণিতিক সমস্যা সবার সামনে আনেন।
1913 সালে রামানুজন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ হার্ডির কাছে তার মৌলিক কিছু অংক নিয়ে কাজ পাঠান। সেই সময় রামানুজনের বয়স মাত্র 32 বছর। গডফ্রে হেরাল্ড হার্ডি রামানুজনের পাঠানো সেই অংক গুলিকে বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্লেষণ করার পর বুঝতে পারলেন আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও রামানুজনের পাঠানো অংকগুলিতে লুকিয়ে আছে জটিল রহস্য
তিনি তার সহকর্মী গণিতের অধ্যাপক জে ই লিটিল উড এর সাথে পরামর্শ করলেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে রামানুজনের পাঠানো অংকগুলি প্রতিটি এক একটি মৌলিক গবেষণার বিষয় বস্তু এইরকম একজন গণিত প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া দরকার তাই হার্ডি রামানুজনকে ইংল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানালেন। হার্ডী রামানুজন কে লিখলেন…
“I was exceedingly interested by your letter and by the theorems which you state. You will however understand that, before I can judge properly of the value of what you have done, it is essential that I should see proofs of some of your assertions. Your results seem to me to fall into roughly three classes:
।। Hardy
(1) there are a number of results that are already known, or easily deducible from known theorems;
(2) there are results which, so far as I know, are new and interesting, but interesting rather from their curiosity and apparent difficulty than their importance;
(3) there are results which appear to be new and important…“
রামানুজন হার্ডি কে লিখলেন ….
“I have found a friend in you who views my labours sympathetically… I am already a half starving man. To preserve my brains I want food and this is my first consideration. Any sympathetic letter from you will be helpful to me here to get a scholarship either from the university of from the government.“
।। Ramanujan
১৯১৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে যান এবং সেখানে গবেষণা করেন। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রয়েল সোসাইটি অফ লন্ডনের ফেলোশিপ পান।
এরপর বিজ্ঞানী হার্ডি এবং রামানুজন একসাথে প্রায় পাঁচ বছর অংক নিয়ে গবেষণার কাজ করেন সেই সময় তারা অনেক জটিল অংকের ও সমাধান করেছিলেন। এই দুই বিজ্ঞানীর কাছেই আকর্ষণীয় বিষয় ছিল সংখ্যাতত্ত্ব। প্রতিটি সংখ্যার আড়ালেই যে গোপন কিছু সূত্র লুকিয়ে আছে সেগুলোর আবিষ্কার করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।।
রামানুজনের উল্লেখযোগ্য কাজ
রামানুজনের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- গামা ফাংশন, মডুলার রূপ, অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশসমূহ, অপসারী ধারা, অধিজ্যামিতীয় ধারা, মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব ও মক থেটা ফাংশন। এছাড়া হার্ডির সঙ্গে মিলে উদ্ভাবন করেছেন- উচ্চতর যৌগিক সংখ্যাসমূহের বৈশিষ্ট্য এবং বিভাজন ফাংশন ও এর অসীমতট সম্পর্কীয় তত্ত্বসমূহ
রামানুজন এর অসুস্থতা
এরপর রামানুজন যক্ষা আক্রান্ত হন দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই সময় হার্ডি তার সাথে দেখা করতে আসেন। কথা প্রসঙ্গে রামানুজন হাডিকে তিনি যে গাড়িতে করে এসেছেন তার নাম্বার জিজ্ঞাসা করেন।
হার্ডি ট্যাক্সির নাম্বার বলেন ১৭২৯ , এবং এর সাথে তিনি বলেন যে এই সংখ্যাটির মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব কিছু নেই। হাসপাতালের রোগ শয্যায় শুয়ে রামানুজন তাকে বলেন না এটি ঠিক নয় এই সংখ্যাটি এমন একটি বিশেষ সংখ্যা যেটিকে দু’রকম সংখ্যার ঘনর আকারে প্রকাশ করা যায়। আর এই রকম সংখ্যা এটি ক্ষুদ্রতম। এটি হার্ডি-রামানুজন নম্বর নামে পরিচিত হয়
১৭২৯= ১২৩ + ১৩ = ১০৩ + ৯৩
রামানুজনের এই কথায় হার্ডি অবাক হয়ে যান। মৃত্যু পথযাত্রী এই অসামান্য প্রতিভার প্রতি সত্যিই তার করুণা হয়
গণিতের এক অসামান্য প্রতিভা রামানুজন।
রামানুজন অংকের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছিলেন। তাকে ভাস্করাচার্যের যোগ্য উত্তরসূরী বলা হয়ে থাকে। ১৯৫৭ সালে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ এর উদ্যোগে তার গবেষণালব্ধ ফলগুলি বইয়ের আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবং তা প্রকাশ করা হয়।
মৃত্যু
১৯১৯ সালের মার্চ মাসে রামানুজন দেশে ফিরে আসেন। বহু চিকিৎসা সত্ত্বেও তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠলেন না। ১৯২০ সালের ২৬ শে এপ্রিল তদানীন্তন মাদ্রাজ শহরে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
আরো দেখুন : মেঘনাদ সাহা: খ্যাতনামা বাঙালি বিজ্ঞানী | থার্মাল আয়োনাইজেশন তত্ত্ব
আরো দেখুন : সত্যেন্দ্রনাথ বসু |Satyendra Nath Bose Biography in Bengali
আরো দেখুন :ভারতীয় রসায়নের জনক: আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
আরো দেখুন :জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনী | বাংলার বিজ্ঞান চর্চায় জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান
🅵🅰🆀
Q.1: কোন সালে হার্ডি রামানুজনকে ইংল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানান?
Ans: হার্ডি রামানুজনকে ১৯১৩ সালে ইংল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানান।
Q.2: রামানুজনের মৃত্যু কখন হয়েছিল এবং কোথায়?
Ans: রামানুজনের মৃত্যু হয়েছিল ১৯২০ সালের ২৬ শে এপ্রিল মাদ্রাজ শহরে।
Q.3: শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্ম কোথায় এবং কখন হয়েছিল?
Ans: শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্ম তামিলনাড়ুর বিরোধ অঞ্চলের একটি গ্রামে হয়। তার জন্ম তারিখ হল ২২শে ডিসেম্বর ১৮৮৭ সালে।
Q.4: রামানুজন এর বাবা কি করতেন?
Ans: রামানুজনের বাবা একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন।
Q.5: কোন বই থেকে রামানুজন কয়েক দিনের মধ্যে কঠিন গণিত সমস্যা সমাধান করেছিলেন?
Ans: রামানুজন ত্রিকোণমিতির বই থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই কঠিন গণিত সমস্যা সমাধান করেছিলেন।
Q.6: শ্রীনিবাস রামানুজন কেন বিখ্যাত ?
Ans: শ্রীনিবাস রামানুজন ভারতের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ। স্বল্প আয়ুকালে তিনি তার গণিত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন
Q.7: শ্রীনিবাস রামানুজন লাকি নাম্বার?
Ans: 1729
Q.8: 1729 সংখ্যাটিকে কি বলা হয়?
Ans: এটি হার্ডি-রামানুজন নম্বর নামে পরিচিত
Q.9: ভারতে ফেরার আগে রামানুজন ইংল্যান্ডে কত বছর কাটিয়েছিলেন?
Ans: পাঁচ বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়েছিলেন
Q.10: রামানুজ সংখ্যা কোনটি?
Ans: 1729