বিশ্বের দরবারে যে সমস্ত বাঙালি বিজ্ঞানী ভারতের বিজ্ঞান চর্চাকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বিজ্ঞানী হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম ও বংশ পরিচয় | Satyendra Nath Bose Birth Place

১৮৯৪ সালের পয়লা জানুয়ারি উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে, ঈশ্বর মিত্র লেনে, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম হয়। তার আদিবাড়ি ছিল কাঁচরাপাড়ার কাছাকাছি বড় জাগুলিয়া গ্রামে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু বড় হন কলকাতাতেই। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পিতা ছিলেন সুরেশ চন্দ্র বসু। প্রথমে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়েতে ওপরে ইস্টবেঙ্গল রেলওয়েতে হিসাব রক্ষক হিসাবে ছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মা ছিলেন আমোদিনী দেবী। আমাদের দেবী ছিলেন তখনকার দিনের বিখ্যাত মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা। সত্যেন্দ্রনাথ বসু পিতা মাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শিক্ষা | Scientist Satyendra Nath Bose Biography
১৯১৩ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিএসসি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন। এমএসসি পড়ার সময় তখনকার খ্যাতনামা চিকিৎসক ডাক্তার যোগেন্দ্র নাথ ঘোষের কন্যা, ঊষা দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শৈশবে মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই তার শিক্ষা শুরু হয়। নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে এন্ট্রান্স ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর হিন্দু স্কুলে ভর্তি হন।
তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে তার অসম্ভব দক্ষতা এবং পাণ্ডিত্য ছিল। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। দেশে তখন স্বদেশী আন্দোলনের হাওয়া। দলে দলে তরুণ যুবকরা স্বদেশী আন্দোলনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু কিন্তু সেই সময় নিজেকে আন্দোলনের এই আবহাওয়া থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে তার সাথে কিছু বিখ্যাত মানুষ সহপাঠী ছিলেন যেমন মানিক লাল দে, জ্ঞান নাথ মুখোপাধ্যায়, পুলিনবিহারী সরকার। এর মধ্যে পুলিনবিহারী সরকারের নাম সবারই পরিচিত।
পাঠ্যপুস্তক এর বাইরে ও তিনি নানা বই থেকে জ্ঞান অর্জন করতেন। গণিত বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং ভালোলাগা ছিল। তিনি সেই সময় প্রবন্ধ এবং গল্প লেখা ও শুরু করেছিলেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 1915 সালে এমএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
সত্যেন্দ্র নাথ বসুর কর্মজীবন
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার হিসেবে। এর পাশাপাশি গবেষণার কাজও তিনি চালিয়ে যেতে থাকেন। ব্রিটেনের ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর তখনকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে সেই প্রবন্ধের একটি কপি পাঠানো হয়। আইনস্টাইন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই প্রবন্ধটি পড়ে বিস্মৃত হন এবং জার্মান ভাষায় রূপান্তরিত করে জার্মানির একটি পত্রিকার প্রকাশ করেন। এরপরে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সেই প্রবন্ধটি “বোস আইনস্টাইন সংখ্যায়ন” বা “বোস সংখ্যান” নামে পরিচিত হয়।
বিদেশ ভ্রমণ
১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে Satyendra Nath Bose ইউরোপ যাত্রা করেন। বিদেশে গিয়ে তার পরিচয় হয় অধ্যাপক সিদভালভির সাথে। তাছাড়াও তিনি মাদাম কুরির সাথে দেখা করেন। বার্লিনে গিয়ে দেখা হয় মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে। তিনি 1951 সালে আন্তর্জাতিক পরিগণন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিবেচনার জন্য ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে বিশ্ব শান্তি কংগ্রেসের আমন্ত্রণে তিনি বুদাপেস্টে গিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে সুইডেন এবং সেপ্টেম্বর মাসে মস্কোতে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্মজীবনে কৃতিত্ব
১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯২৯ সালে বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি হন। এছাড়াও ১৯৪৪ সালে দিল্লিতে হওয়া বিজ্ঞান কংগ্রেসের ৩১ তম অধিবেশনে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজের খয়রা অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই কাজ করেন।
তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্য হয়েছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন। ভারতীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য।তিনি বিভিন্ন সময়ে পরিসংখ্যান মন্দিরের সহ-সভাপতি, কলকাতা গণিত সমিতির সভাপতি, জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সহ সভাপতি এবং বৈজ্ঞানিক ও শ্রম শৈল্পিক গবেষণা সংস্থার সদস্য ছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রাপ্ত সম্মান ও পুরস্কার
১৯৫৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসাবে স্বীকৃতি পান। অন্যান্য বাঙালি বিজ্ঞানীদের মত তিনি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে প্রচার করেন। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “ইমারেটাস প্রফেসর” হিসেবে নির্বাচিত করেছিল।
পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও তাকে ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট উপাধি পান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কাকে “দেশিকোত্তম” উপাধি প্রদান করে। ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে “পদ্মবিভূষণ” সম্মান প্রাপ্ত হয়েছিলেন।লন্ডনে রয়েল সোসাইটি তাকে ফেলল নির্বাচন করেছিল।
পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত শাস্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজীবন গবেষণা করে গেছেন এবং গবেষণালব্ধ ফলগুলিকে জনসাধারণের গোচরে আনার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়তার আসনে বসানোর জন্য তিনি স্থাপন করেছিলেন “বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ“। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ বাংলা ভাষায় বই প্রকাশ করে। বর্তমানেও বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কারণে বাঙালি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছে চিরকাল ঋণী।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মৃত্যু
১৯৭৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি এই মহান বিজ্ঞানী মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা করেন।
🅵🅰🆀
Q.1: সত্যেন্দ্রনাথ বসু কে?
Ans: সত্যেন্দ্রনাথ বসু বাঙালি বিজ্ঞানী এবং ভারতের বিজ্ঞান চর্চার অগ্রগণ্য ব্যক্তি।
Q.2: সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম ও পরিচয় কী?
Ans: ১৮৯৪ সালে উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন, তার পিতা ছিলেন সুরেশ চন্দ্র বসু এবং মা ছিলেন আমোদিনী দেবী।
Q.3: সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শিক্ষা কী?
Ans: তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, বিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে অসম্ভব দক্ষতা এবং পাণ্ডিত্য ছিল।
Q.4: সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার কী?
Ans: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি হন।
Q.5: সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রাপ্ত সম্মান কী কী?
Ans: তিনি বেশ কিছু সম্মান পেয়েছিলেন, যেমন: জাতীয় অধ্যাপক, পদ্মবিভূষণ, ইমারেটাস প্রফেসর
Q.6:সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মৃত্যু কবে হয় ?
Ans: ১৯৭৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারিতে তার মহাপ্রস্থান হয়।
- 5.1 ভারত: অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ | Class 10 Geography Short Question and Answer 20255.1 ভারত: অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and …
- চক্রপাণি দত্ত: কিংবদন্তী চিকিৎসক ও পণ্ডিতচক্রপাণি দত্ত ছিলেন বিখ্যাত একজন আদর্শ চিকিৎসক এবং শারীরতত্ত্ববিদ। বহু দূর থেকে রোগীরা তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য আসতেন। তিনি রোগীদের চিকিৎসা করতেন আনন্দ …
- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের EWS সার্টিফিকেট পাওয়ার পদ্ধতি | EWS Certificate West Bengal Criteria | EWS সার্টিফিকেট কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?EWS সম্পূর্ণ কথাটি হল ইকনোমিক্যালি উই কার সেকশন (Economically Weaker Section) বা সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি। EWS সার্টিফিকেটের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের অর্থনৈতিকভাবে …
- ধাতুবিদ্যা দশম শ্রেণী – প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion ভৌত বিজ্ঞান দশম শ্রেণীদশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion – ধাতুবিদ্যা দশম শ্রেণী Chapter 8.5 – প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হল …
- তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া – প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion ভৌত বিজ্ঞান দশম শ্রেণীদশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion – তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া Chapter 8.3 – প্রশ্ন উত্তর …
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবাহমানতা (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Life Science Question and Answerমাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর : জীবনের প্রবাহমানতা (দ্বিতীয় অধ্যায়) Madhyamik Life Science Question and Answer : মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবাহমানতা …