
কে উধম সিং? কে সর্দার উধম সিং?
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শহীদ উধম সিং এক অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর জীবন এক নাটকীয় প্রতিশোধের কাহিনি, যা শুরু হয়েছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নথি অনুযায়ী, উধম সিং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন—রাম মহম্মদ সিং আজাদ, শের সিং, উদে সিং, এমনকি ফ্র্যাঙ্ক ব্রাজিল। কিন্তু তাঁর আসল নাম ছিল উধম সিং। ২১ বছর ধরে তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডায়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ভয়াবহ বিকেলে।
শহীদ উধম সিং ও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড
বৈশাখী উৎসবের দিনে বহু মানুষ অমৃতসরে সমবেত হয়েছিলেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ ময়দানে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভা চলছিল। উধম সিং, তখন উনিশ বছরের এক যুবক, বন্ধুদের সাথে সভায় আগতদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করছিলেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ময়দানের একমাত্র প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ বন্ধ করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। এই গণহত্যায় বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান, উধম সিংয়ের অনেক বন্ধুও সেই তালিকায় ছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে, উধম সিং সেদিন প্রাণে বেঁচে যান।
Sardar Udham Singh Story in Bengali
অল্প বয়সেই মাতাপিতা হারা উধম সিং অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছিলেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই হত্যাকাণ্ড তাঁর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। চোখের সামনে এতগুলো মানুষের নৃশংস মৃত্যু তাঁকে শোকাহত করে তোলে, সম্ভবত সেদিনই তিনি তাঁর জীবনের লক্ষ্য স্থির করেন—এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়া।
জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার পর উধম সিং স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯২৪ সালে তিনি গদর পার্টিতে যোগ দেন এবং ভগৎ সিংয়ের মতো বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯২৭ সালে অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন ভগৎ সিংকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
Shaheed Udham Singh in Bengali
এরপর শুরু হয় উধম সিংয়ের একাকী লড়াই। মিথ্যা পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি প্রথমে জার্মানিতে যান, এবং ১৯৩৪ সালে আরও একটি মিথ্যা পরিচয়ে লন্ডনে প্রবেশ করেন। ততদিনে মাইকেল ও’ডায়ার অবসর নিয়ে লন্ডনেই বসবাস করছিলেন। উধম সিং চাইলেই হয়তো তখনই ও’ডায়ারকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি একটি বড় সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি গোটা ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে পারেন।
অবশেষে, ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ, ওয়েস্টমিনস্টারের ক্যাক্সটন হলে উধম সিং তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পান। তিনি মাইকেল ও’ডায়ারকে গুলি করে হত্যা করেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, মৃত্যুদণ্ডের আগে আদালতে যখন উধম সিংকে শেষবারের মতো কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়, তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমি এই মৃত্যুদণ্ডের পরোয়া করি না। আমরা ভারতীয়রা দিনের পর দিন ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারে জর্জরিত। কিন্তু তবুও আমি ব্রিটিশদের ঘৃণা করি না। এই ইংল্যান্ডেই আমার অনেক ব্রিটিশ বন্ধু আছে। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি এই নোংরা ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করব।”
উধম সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড
এই বক্তব্যের পরই বিচারক অ্যাটকিনসন উধম সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১৯৪০ সালের ৩১শে জুলাই পেন্টোভিল জেলে ফাঁসি হয় এই মহান বিপ্লবীর। শহীদ উধম সিং তাঁর সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও প্রতিশোধ স্পৃহার জন্য আজও ভারতীয়দের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
উধম সিং এর জীবনী নিয়ে আজকের এই পোস্ট টি তে আমরা জানলাম কে উধম সিং? কে সর্দার উধম সিং? শহীদ উধম সিং ও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড,Shaheed Udham Singh in Bengali, Udham Singh, Sardar Udham Singh, Udham Singh Jayanti, Sardar Udham Singh Movie, Sardar Udham Singh story। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই ভাবে Bigyan Siksha ওয়েবসাইট টির পাশে থাকুন
FAQ
Q.1: শহীদ উধম সিং কে ছিলেন?
Ans: শহীদ উধম সিং ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অমর বিপ্লবী, যিনি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিখ্যাত।
Q.2: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে কী ঘটেছিল?
Ans: ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভায় নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
Q.3: উধম সিংয়ের জীবনে জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার কী প্রভাব পড়ে?
Ans: উধম সিং তাঁর বন্ধুদের নৃশংস মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন এবং সেদিনই তিনি এই গণহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
Q.4: উধম সিং মাইকেল ও’ডায়ারকে কেন হত্যা করেছিলেন?
Ans: মাইকেল ও’ডায়ার পাঞ্জাবের তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন, যিনি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিলেন। উধম সিং ২১ বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন
Q.5: উধম সিং কীভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিলেন?
Ans: উধম সিং বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন। তাঁর ছদ্মনামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাম মহম্মদ সিং আজাদ এবং ফ্র্যাঙ্ক ব্রাজিল।
Q.6: উধম সিং মাইকেল ও’ডায়ারকে কখন এবং কোথায় হত্যা করেন?
Ans: উধম সিং ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের ক্যাক্সটন হলে মাইকেল ও’ডায়ারকে গুলি করে হত্যা করেন
Q.7: উধম সিংয়ের শেষ বক্তব্য কী ছিল?
Ans: মৃত্যুদণ্ডের আগে উধম সিং আদালতে বলেন, “আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। আমি ব্রিটিশ শাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি এবং তা করতে থাকব।”
Q.8: উধম সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড কখন কার্যকর হয়?
Ans: ১৯৪০ সালের ৩১শে জুলাই পেন্টোভিল জেলে উধম সিংয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়।
Q.9: শহীদ উধম সিংয়ের গুরুত্ব কী?
Ans: শহীদ উধম সিং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসিকতা, দেশপ্রেম এবং প্রতিশোধ স্পৃহার জন্য ভারতীয়দের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
- 5.1 ভারত: অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ | Class 10 Geography Short Question and Answer 2025
5.1 ভারত: অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 10th Madhyamik Geography Examination – পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট তোমরা যারা মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য 5.1 ভারত: অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও … - চক্রপাণি দত্ত: কিংবদন্তী চিকিৎসক ও পণ্ডিত
চক্রপাণি দত্ত ছিলেন বিখ্যাত একজন আদর্শ চিকিৎসক এবং শারীরতত্ত্ববিদ। বহু দূর থেকে রোগীরা তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য আসতেন। তিনি রোগীদের চিকিৎসা করতেন আনন্দ সহকারে এবং অবসর সময়ে বই লিখতেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘চিকিৎসা সংগ্রহ‘, ‘দ্রব্য গুণ‘ এবং ‘সর্বসার সংগ্রহ‘ উল্লেখযোগ্য। ‘চক্রদত্ত‘ নামক গ্রন্থে তিনি চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন। টীকাকার ও উপাধি চক্রপাণি দত্ত … - পশ্চিমবঙ্গ সরকারের EWS সার্টিফিকেট পাওয়ার পদ্ধতি | EWS Certificate West Bengal Criteria | EWS সার্টিফিকেট কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
EWS সম্পূর্ণ কথাটি হল ইকনোমিক্যালি উই কার সেকশন (Economically Weaker Section) বা সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি। EWS সার্টিফিকেটের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশকে নির্দিষ্ট কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া।এই সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরিতে 10% সংরক্ষণ পাওয়া যেতে পারে। শুধুমাত্র জেনারেল কাস্ট যারা অন্য কোন সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত … - ধাতুবিদ্যা দশম শ্রেণী – প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion ভৌত বিজ্ঞান দশম শ্রেণী
দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion – ধাতুবিদ্যা দশম শ্রেণী Chapter 8.5 – প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হল । এই WBBSE Class 10th (X) Madhyamik Physical Science Suggestion – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – ধাতুবিদ্যা দশম শ্রেণী – প্রশ্ন উত্তর গুলি আগামী 2026 সালের পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান … - তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া – প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion ভৌত বিজ্ঞান দশম শ্রেণী
দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – WBBSE Class 10th Physical Science Suggestion – তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া Chapter 8.3 – প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হল । এই WBBSE Class 10th (X) Madhyamik Physical Science Suggestion – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞান সাজেশন – তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া – প্রশ্ন উত্তর গুলি আগামী সালের পশ্চিমবঙ্গ … - মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবাহমানতা (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Life Science Question and Answer
মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর : জীবনের প্রবাহমানতা (দ্বিতীয় অধ্যায়) Madhyamik Life Science Question and Answer : মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবাহমানতা (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Life Science Question and Answer, দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় এর প্রশ্ন উত্তর pdf নিচে দেওয়া হলো MCQ প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – …