বাংলার রাজনীতিতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস | দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস জীবনী

Deshbandhu Chittaranjan Das

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস

জন্ম: ৫ই নভেম্বর ১৮৭০ 

মৃত্যু: ১৬ই জুন ১৯২৫

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস জীবনী

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক বিশ্ববন্দিত নাম হল দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি সংক্ষেপে সি আর দাস নামেই পরিচিত ছিলেন। জনগণের সব সময় উপকারী সচেষ্ট থাকতেন বলে তাকে দেশবন্ধু বলে অভিহিত করা হতো।
মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে চিত্তরঞ্জন দাশের জন্ম। সালটা ১৮৭০। তার পিতার নাম ভুবনমোহন দাস যিনি কলকাতা হাইকোর্টের সলিসিটর ছিলেন।

কলকাতার ভবানীপুরে অবস্থিত লন্ডন মিশনারি সোসাইটি ইনস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৮৮৬ সালে লন্ডন মিশনারি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন তারপর ১৮৯০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য লন্ডন যান। ১৮৯৪ সালে তিনি ব্যারিস্টার হন।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অবদান | দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বাংলা

সেখানে দাদাভাই নৌরোজির কাছাকাছি আসেন। এটি তার জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা কারণ নৌরজির সান্নিধ্য তাকে দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। ব্যারিস্টারি পাস করে ১৮৯৪ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্রেরঅনুশীলন সমিতির’ তিনি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯০৮ সালে ‘আলিপুর বোমা মামলায়’ অরবিন্দ ঘোষের হয়ে জোরালোভাবে সওয়াল করেন এবং তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন। এর পরবর্তীকালেও অরবিন্দ ঘোষের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। জানা যায় অরবিন্দ ঘোষ পন্ডিচেরিতে প্রচন্ড অর্থকষ্টে পড়লে তিনি তার কাব্যগ্রন্থ ‘সাগর সঙ্গীত’ ইংরেজিতে অনুবাদ করে ১০০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।

দেশবন্ধু কাকে বলা হয় ?

১৯১৭ সালে প্রত্যক্ষভাবে দেশের রাজনীতিতে যোগদান করেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দক্ষ। কিন্তু বিপুল পসার এর লোভ ত্যাগ করে স্বদেশব্রত পালনে আত্মনিয়োগ করেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ‘অসহযোগ আন্দোলনে”(১৯২০-২২) তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

যদিও এর পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীর সাথে তার মতপার্থক্য হয় এবং মতিলাল নেহেরুর সাথে ১৯২৩ সালে ‘স্বরাজ্য দল’ গঠন করেন। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আর এক মহান বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসু

সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ বন্ধুর উত্তরসূরী হিসাবে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উদ্যোগে ১৯২৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’। 

১৯২৫ সালে ১৬ই জুন মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তার অকাল মৃত্যু হয়। তার অকাল মৃত্যু ভারতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপরে আঘাত আনে। আবুল কালাম আজাদ মন্তব্য করেন,

তিনি অকালে মারা না গেলে দেশে নতুন অবস্থা সৃষ্টি করতেন পরিতাপের বিষয়ে এই যে তার মৃত্যুর পর তার কিছু সংখ্যক অনুসারী তার অবস্থানকে জর্জরিত করে এবং তার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে এর ফলে বাংলার মুসলমানরা কংগ্রেস থেকে দূরে সরে যায় এবং ভারত বিভক্তির প্রথম বীজ বপন করা হয়।

তার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, মৌলিক চিন্তা ভারতীয় রাজনীতিতে তাকে অনন্য সাধারণ করে তুলেছিল।

দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উক্তি

পরিষ্কার কাঁচ যেমন মানুষের দৃষ্টির অন্তরায় না হইয়া সাহায্য করে, কথাও ঠিক তেমনি ভাবকে জমাইয়া তােলে।

…….চিত্তরঞ্জন দাশ

যে আপনাকে দুর্বল হইতে দেয়, তাহার বলহীনতা যে তাহারই দোষ। জগতের ইতিহাস বার বার সপ্রমাণ করিয়া দিয়াছে যে, এক জাতিকে অন্য কোনাে জাতি হাতে ধরিয়া তুলিয়া দিতে পারে না। 

……চিত্তরঞ্জন দাশ

মানুষ যখন প্রেমের ভিতর দিয়া স্বাধীন হয়, মিলিত হয়, তখন সে নির্বাণ মুক্তি চায় না। সে তখন তাহার প্রিয়তমের সহিত প্রাণের লীলাভঙ্গে আনন্দরস ভােগ করে কে তখন তােমার মায়াবাদের সূত্র প্রতিপাদ্যের ধার ধারে।’ 

……চিত্তরঞ্জন দাশ

বাংলা আপনার আত্মবিকাশ আপনি করিবে, আপনার গান আপনি গাহিবে, আপন সাধন দ্বারা সেই সিদ্ধিলাভ করিবে ও আপন জগতের সম্মুখে দাঁড়াইবে।

……চিত্তরঞ্জন দাশ

দেশের সর্বত্র এখন একটা সাড়া পড়ে গেছে। আমরাও এই আন্দোলনে অংশ নেব। ভারতবাসীর পূর্ণ স্বাধীনতা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন বন্ধ হবে না।’

……চিত্তরঞ্জন দাশ

হে ভারতবাসী, তােমাকে মনে রাখতে হবে, তুমি জন্ম থেকে একটি নির্দিষ্ট কর্মসম্প্রদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত পরাধীন ততক্ষণ কোনাে রকম অলসতার মধ্যে দিয়ে সময় কাটাবে না। তােমার সামনে যে ভবিষ্যৎ তা তুমিই তৈরি করতে পারাে।

……চিত্তরঞ্জন দাশ

🅵🅰🆀

Q.1: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের জন্ম ও মৃত্যু কবে?

Ans: তিনি ৫ই নভেম্বর ১৮৭০ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬ই জুন ১৯২৫ মৃত্যু বরণ করেন।

Q.2: দেশবন্ধুর নামকরণের কারণ কী?

Ans: জনগণের প্রতি সদা উপকারী হওয়ার কারণে তাকে “দেশবন্ধু” বলা হয়।

Q.3: চিত্তরঞ্জন দাসের শিক্ষা জীবন কেমন ছিল?

Ans: তিনি কলকাতার লন্ডন মিশনারি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

Q.4: চিত্তরঞ্জন দাস কবে ব্যারিস্টার হন?

Ans: তিনি ১৮৯৪ সালে ব্যারিস্টার হন।

Q.5: আলিপুর বোমা মামলায় তিনি কী ভূমিকা পালন করেন?

Ans: তিনি অরবিন্দ ঘোষের পক্ষে সওয়াল করে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন।

Q.6: তিনি কখন রাজনীতিতে যোগদান করেন?

Ans: ১৯১৭ সালে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন।

Q.7: সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে তার সম্পর্ক কেমন ছিল?

Ans: সুভাষচন্দ্র বসু তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত হন।

Q.8: চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যুর পর কী প্রভাব পড়ে?

Ans: তার অকাল মৃত্যু ভারতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপরে আঘাত আনে।

Leave a Comment